Tuesday, October 4, 2011

ডির্ক কস্টার

বাবা করতেন কামারের কাজ। তাই সবার ধারণা, ছেলেটিও বড় হয়ে কামারের কাজ করবে। কিন্তু বাবা বার্নার্ড কস্টার ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া শ্রমজীবী এক মানুষ। ১০ সন্তানের পড়াশোনার জন্য বার্নার্ড আমস্টারডামের পথের ধারে দিনরাত কষ্ট করে কামারের কাজ করে গেছেন। লক্ষ্য একটাই, সন্তানেরা মানুষ হবে, শিক্ষিত হবে। ছেলেদের পড়াশোনা না দেখিয়ে দিতে পারলেও বাবা ছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক। ১৮৮৯ সালে জন্ম নেওয়া ডির্ক কস্টার বাবার উৎসাহেই হারলেম কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯০৮ সালে পড়াশোনা শেষে একই কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯১৬ সালে ডেল্ফট প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকের সহকারী হিসেবে যোগ দেন। ১৯১৯ সালে ডির্ক তড়িৎ প্রকৌশলের ওপর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২২ সালে তিনি রঞ্জন রশ্মির ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর পিএইচডি ডিগ্রির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন আরেক বিখ্যাত পদার্থবিদ ও গণিতবিদ পল আরেনফেস্ট।
ডির্ক ১৯২২ সালে এক বছরের জন্য কোপেনহেগেনের নিলস বোর ইনস্টিটিউটে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯২৩ সালে বিখ্যাত পদার্থবিদ নিলস বোরের সঙ্গে সহলেখক হিসেবে তাঁর একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধটির বিষয়বস্তু ছিল রঞ্জন রশ্মির বর্ণালি ও মৌলের পর্যায় সারণির ওপর। তিনি বিখ্যাত রসায়নবিদ ভন হেভেসির সঙ্গে কাজ করেন। হেভেসিকে তিনি পর্যায় সারণির ৭২তম মৌল হাফনিয়াম আবিষ্কারে সহায়তা করেন। তিনি পরবর্তী সময়ে পদার্থে নোবেল বিজয়ী গবেষক হেনড্রিক লোরেন্টজের সহকারী হিসেবে হারলেম টেইলারস জাদুঘরের গবেষণাগারে যোগদান করেন। ডির্ক এ গবেষণাগারে এক্স-রে স্পেকট্রোমিটারের উন্নয়নে কাজ করেন। ১৯২৪ সালে ডির্ক কস্টার গ্রোনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বৃহৎ পরিসরে রঞ্জন রশ্মি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। রঞ্জন রশ্মির বর্ণালির গতিপ্রকৃতি ও মৌলগুলোর বর্ণালির প্রভাব ছিল তার গবেষণার বিষয়। তিনি আধুনিক এক্স-রে স্পেকট্রোমিটারের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। বিখ্যাত এই ডাচ পদার্থবিদ ১৯৫০ সালে গ্রোনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবেই গবেষণারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। বর্ণালি বীক্ষণের ওপর বিশদ গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ ডির্ক কস্টারের নামে একটি গ্রহাণুর ‘১০৪৪৫ কস্টার’ নামকরণ করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment