Tuesday, August 7, 2012

মঙ্গলে নামল কিউরিওসিটি

অবশেষে সব উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলে নামল নাসার রোবট যান রোভার কিউরিওসিটি। গতকাল সোমবার গ্রিনিচ মান সময় ভোর পাঁচটা ৩২ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টা) লাল গ্রহটিতে সফলভাবে অবতরণ করে মাকড়সা আকৃতির এ যানটি।  
মঙ্গল গবেষণার ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত নাসার বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। রোবট যানটির ওজন প্রায় এক টন। এই প্রথম নাসা এত বেশি ওজনের যান কোনো গ্রহে সফলভাবে নামাতে সক্ষম হলো। 
কিউরিওসিটির মঙ্গলে অবতরণ নিয়ে উৎকণ্ঠ ছিল নাসার বিজ্ঞানীদের মধ্যে। তাই কিউরিওসিটির অবতরণের ঘোষণার পর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। প্রধান বিজ্ঞানীরা ‘মার্স চকোলেট’ বার নাসার কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করেন। 
নাসার প্রশাসক চার্লস বোল্ডেন বলেন, ‘আমরা আবারও মঙ্গলে—এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য! এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। 
কিউরিওসিটির পাঠানো প্রথম ছবিটি ধূসর। তাতে রোভারের চাকা মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করার দৃশ্য দেখা গেছে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দ্বিতীয় ছবি পাঠায় রোভার, তাতে রয়েছে মঙ্গলে রোভারের ছায়া। 
মঙ্গলের আবহাওয়া মন্ডলে প্রবেশের আগ মুহূর্তে মহাকাশ যানটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩ হাজার ২০০ মাইল। প্রথমে সুপারসনিক প্যারাসুটের সাহায্যে গতি কমানো হয়। পরে গতি আরো নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর ক্রেনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ছয় চাকায় ভর করে ভূমিতে নামে রোভার। এ সময় এটির গতি ছিল সেকেন্ডে মাত্র শূন্য দশমিক ৬ মিটার। অবতরণের জন্য আগেই গিরিখাদ গেইল কার্টার বেছে নেওয়া হয়েছিল। এখানে অতীতে পানি থাকার অনেক চিহ্ন পাওয়া গেছে। আগামী দুই বছর কিউরিওসিটি গিরিখাদের তলা থেকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠবে। এটি পাথুরে ভূমি খুঁড়ে দেখবে, সেখানে প্রাণের বিকাশের কোনো পরিবেশ আছে কি না। 
মঙ্গলে অবস্থানকালে পারমাণবিক শক্তিতে চলবে কিউরিওসিটি। এটি নানা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিতে ঠাসা। আছে ক্যামেরা, আবহাওয়া নিরীক্ষণ কেন্দ্র, শক্তিশালী ড্রিলসহ রোবটিক হাত, দূর থেকে পাথর চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে সক্ষম লেজার, রাসায়নিক গবেষণাগার ও বিকিরণ মাপার যন্ত্র। 
কিউরিওসিটি মঙ্গলে মানুষ কিংবা জীবের অস্তিত্ব খুঁজে পাবে—এমনটা প্রত্যাশা করছেন না বিজ্ঞানীরা। তবে তাঁরা আশা করছেন, এটির সাহায্যে মঙ্গলের মাটি ও পাথর গবেষণা করে তাঁরা জানতে পারবেন, সেখানে অতীতে প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল কি না। এ ছাড়া ভবিষ্যতে মানুষের যাওয়ার উপযোগী পরিবেশ আছে কি না, তা-ও গবেষণা করে দেখা হবে। 
২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভারেল থেকে যাত্রা শুরু করে কিউরিওসিটি। সাড়ে আট মাসের এই অভিযানে যানটি এরই মধ্যে বিকিরণের ওপর নানা তথ্য সংগ্রহ করেছে। মঙ্গলের পথে কিউরিওসিটি ৩৫ কোটি ২০ লাখ মাইল পাড়ি দিয়েছে। ১২ বছরের প্রস্তুতি শেষে এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৫০ কোটি ডলার। 
১৯৬০ সাল থেকে সারা বিশ্বের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলোর মঙ্গল গ্রহে বেশির ভাগ অভিযানই ব্যর্থ হয়েছে। সফলতার হার প্রায় ৪০ শতাংশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধূলিঝড় বা যান্ত্রিক ত্রুটির মতো প্রতিকূলতায় পড়তে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। 
বিবিসি ও এএফপি।